থ্যালাসেমিয়া কী? থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসা কী?
থ্যালাসেমিয়া কী? থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসা কী?
থ্যালাসেমিয়া একধরনের বংশগত রোগ।। এই রোগ শরীরে রক্তস্বল্পতা সৃষ্টি করে যা রক্তের মধ্যে ত্রুটিযুক্ত হিমোগ্লোবিনের জন্য হয়ে থাকে। হিমোগ্লোবিন মানুষের রক্তের খুব দরকারি একটি উপাদান। এটি রক্তের একটি বিশেষ রঞ্জক পদার্থ যা শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন পরিবহন করে। স্বাভাবিক মানুষের রক্তে হিমোগ্লোবিন সাধারণত দু’টি আলফা ও দু’টি বিটা চেইন বহন করে। এ দু’টি চেইনের যে কোনো একটি পরিমাণে কম থাকলে সৃষ্টি হয় থ্যালাসেমিয়া রোগের। পিতা-মাতা থেকে সন্তানদের মধ্যে জিন(GENE) এর মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়া প্রবেশ করে। পিতা-মাতা উভয়েই থ্যালাসেমিয়া জিনের বাহক হলে শিশুর থ্যালাসেমিয়া হবার সম্ভাবনা থাকে। পিতা মাতার একজন বাহক হলে এবং অন্যজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ হলে সন্তানদের থ্যালাসেমিয়া হবার সম্ভাবনা নেই।
থ্যালাসেমিয়া রোগ
দু’রকমের থ্যালাসেমিয়া : থ্যালাসেমিয়া দুইটি প্রধান ধরনের হতে পারে, আলফা থ্যালাসেমিয়া ও বেটা থ্যালাসেমিয়া। যাদের হিমোগ্লোবিনে আলফা অথবা বেটা চেইন পরিমাণে কম থাকে, তাদের বলা হয় আলফা অথবা বেটা থ্যালাসেমিয়া । আলফা থ্যালাসেমিয়ার ক্ষেত্রে রোগের উপসর্গ মৃদু বা মাঝারি প্রকৃতির হয়। অন্যদিকে বেটা থ্যালাসেমিয়ার ক্ষেত্রে রোগের তীব্রতা বা প্রকোপ অনেক বেশি; এক-দুই বছরের শিশুর ক্ষেত্রে ঠিকমত চিকিৎসা না করলে এটি শিশুর মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
থ্যালাসেমিয়ায় কি হয় : রক্তের লোহিত কণিকার আয়ুষ্কাল তিন মাস। লোহিত কণিকা অস্থিমজ্জায় অনবরত তৈরি হচ্ছে এবং তিন মাস শেষ হলেই প্লীহা এ লোহিত কণিকাকে রক্ত থেকে সরিয়ে নিচ্ছে। থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীর লোহিত কণিকার আয়ুষ্কাল অনেক কমে যায়। তাদের হিমোগ্লোবিন ঠিকমতো তৈরি না হওয়ায় লোহিত কণিকাগুলো সহজেই ভেঙে যায় এবং অস্থিমজ্জার পক্ষে একই হারে লোহিত কণিকা তৈরি সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে একদিকে যেমন রক্তশূন্যতা সৃষ্টি হয়, অন্যদিকে প্লীহা আয়তনে বড় হতে থাকে। পরবর্তী সময়ে অতিরিক্ত আয়রন জমা হয়ে হৃৎপিন্ড, প্যানক্রিয়াস, যকৃত, অন্ডকোষ ইত্যাদি অঙ্গের কার্যক্ষমতাকে নষ্ট করে দেয়।
থ্যালাসেমিয়া হলে সাধারণত যেসব লক্ষণ ও উপসর্গগুলো দেখা যায় : অবসাদ অনুভব, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, মুখ-মন্ডল ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, অস্বস্থি, ত্বক হলদে হয়ে যাওয়া (জন্ডিস), মুখের হাড়ের বিকৃতি, নাকের হাড় দেবে যাওয়া (মঙ্গোলয়েড ফেস), শারীরিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হওয়া, পেট ফুলে যাওয়া, গাঢ় রঙের প্রস্রাব।
কাদের থ্যালাসেমিয়া হতে পারে?
বাবা এবং মা যেকোনো একজনের অথবা বাবা মা উভয়েরই থ্যালাসেমিয়া থাকলে তাদের সন্তানের মধ্যেও এই রোগ দেখা দিতে পারে। আবার কিছু কিছু অঞ্চলে এ রোগ বেশি দেখা যায়। যেমন- দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, ইটালি, গ্রীস ইত্যাদি।
বাবা এবং মা যেকোনো একজনের অথবা বাবা মা উভয়েরই থ্যালাসেমিয়া থাকলে তাদের সন্তানের মধ্যেও এই রোগ দেখা দিতে পারে। আবার কিছু কিছু অঞ্চলে এ রোগ বেশি দেখা যায়। যেমন- দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, ইটালি, গ্রীস ইত্যাদি।
কিভাবে জানা যাবে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত বা থ্যালাসেমিয়ার বাহকঃ
হিমোগ্লোবিন ইলেক্ট্রোফোরেসিস পরীক্ষার মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়ার বাহক বা আক্রান্ত ব্যক্তিকে সণাক্ত করা যায়। চিকিৎসাঃবোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন বা অস্থি মজ্জা প্রতিস্থাপন বিটা থ্যালাসেমিয়া মেজরের একমাত্র চিকিৎসা। এছাড়া রক্তশূন্যতার জন্য নিয়মিত রক্ত সঞ্চালনের পাশাপাশি লৌহ অপসারণকারী ওষুধ(IRON CHELATING) দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। বারবার রক্ত পরিসঞ্চালনের ফলে প্লীহা(SPLEEN) অতিমাত্রায় আকৃতিতে বৃদ্ধি পেলে প্লীহা (SPLEEN) অপসারণ করা হয়(SPLENECTOMY)।
হিমোগ্লোবিন ইলেক্ট্রোফোরেসিস পরীক্ষার মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়ার বাহক বা আক্রান্ত ব্যক্তিকে সণাক্ত করা যায়। চিকিৎসাঃবোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন বা অস্থি মজ্জা প্রতিস্থাপন বিটা থ্যালাসেমিয়া মেজরের একমাত্র চিকিৎসা। এছাড়া রক্তশূন্যতার জন্য নিয়মিত রক্ত সঞ্চালনের পাশাপাশি লৌহ অপসারণকারী ওষুধ(IRON CHELATING) দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। বারবার রক্ত পরিসঞ্চালনের ফলে প্লীহা(SPLEEN) অতিমাত্রায় আকৃতিতে বৃদ্ধি পেলে প্লীহা (SPLEEN) অপসারণ করা হয়(SPLENECTOMY)।
থ্যালাসেমিয়া রোগীরা কখন নিয়মিত রক্ত গ্রহণ শুরু করবে?
রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ৭ গ্রাম/ডেসিলিটারের কম হলে নিয়মিত রক্ত গ্রহণ করতে হবে এবং হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ৯-১০.৫ এর উপর রাখতে হবে। শিশুর বৃদ্ধির হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেলে। মুখমণ্ডলের অস্থির পরিবর্তন হলে। হৃৎপিণ্ডের বিভিন্ন পার্শপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলেথ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব
রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ৭ গ্রাম/ডেসিলিটারের কম হলে নিয়মিত রক্ত গ্রহণ করতে হবে এবং হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ৯-১০.৫ এর উপর রাখতে হবে। শিশুর বৃদ্ধির হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেলে। মুখমণ্ডলের অস্থির পরিবর্তন হলে। হৃৎপিণ্ডের বিভিন্ন পার্শপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলেথ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব
স্ক্রিনিং টেস্ট হিমোগ্লোবিন ইলেক্ট্রোফোরেসিস এবং অন্যান্য পরীক্ষার মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়ার বাহক চিহ্নিত করা এবং তাদের প্রত্যেককে জেনেটিক কাউন্সেলিং করা। প্রি ন্যাটাল ডায়াগনসিস-থ্যালাসেমিয়ার জিন বহনকারী মহিলা গর্ভবতী হলে পরীক্ষার মাধ্যমে গর্ভের সন্তানের থ্যালাসেমিয়া আছে কিনা জানা যায় এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় থ্যালাসেমিয়া জিনের বাহক ব্যক্তি বিবাহ পূর্ব রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে সঙ্গী নির্বাচন করতে হবে।
থ্যালাসেমিয়া রোগের চিকিৎসা
মাইনর থ্যালাসেমিয়ার ক্ষেত্রে সাধারণত চিকিৎসার কোন প্রয়োজন হয় না। অপরদিকে মেজর থ্যালাসেমিয়ার ক্ষেত্রে, নিয়মিত রক্ত গ্রহন (প্রয়োজনবোধে বছরে ৮ থেকে ১০ বার) করতে হয়। বার বার রক্ত নেওয়ার ফলে বিভিন্ন অঙ্গে অতিরিক্ত লৌহ জমে যেতে পারে এবং এর ফলে যকৃত বিকল হয়ে যেতে পারে। তাই, এরকম ক্ষেত্রে জটিলতা এড়াতে আয়রন চিলেশন থেরাপীর সাহায্যে অতিরিক্ত লৌহ বের করে দেওয়া হয়।
মাইনর থ্যালাসেমিয়ার ক্ষেত্রে সাধারণত চিকিৎসার কোন প্রয়োজন হয় না। অপরদিকে মেজর থ্যালাসেমিয়ার ক্ষেত্রে, নিয়মিত রক্ত গ্রহন (প্রয়োজনবোধে বছরে ৮ থেকে ১০ বার) করতে হয়। বার বার রক্ত নেওয়ার ফলে বিভিন্ন অঙ্গে অতিরিক্ত লৌহ জমে যেতে পারে এবং এর ফলে যকৃত বিকল হয়ে যেতে পারে। তাই, এরকম ক্ষেত্রে জটিলতা এড়াতে আয়রন চিলেশন থেরাপীর সাহায্যে অতিরিক্ত লৌহ বের করে দেওয়া হয়।
অস্থিমজ্জা (বোন ম্যারো) প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়া রোগ হতে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত হওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে একজন ম্যাচ ডোনার লাগবে। আমাদের দেশে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা না থাকায়, এই অপারেশন দেশের বাইরে গিয়ে করতে হয়।টা খুবই ব্যয়বহুল। আমাদের পাশের দেশে বোন ম্যারো প্রতিস্থাপনে খরচ পড়ে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা। আমাদের দেশে এই চিকিৎসা এখনো শুরু হয়নি। তবে আশা করা যায় অদূর ভবিষ্যতে এটা বাংলাদেশেও করা সম্ভব হবে।
এছাড়াও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আয়রণ এবং ফলিক এসিড সেবন করতে হতে পারে। আবার জীবনযাপন পদ্ধতিতে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। যেমন- চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতিত কোন ঔষধ বা ভিটামিন সেবন না করা, সুষম ও পুষ্টিকর খাবার বিশেষ করে ক্যালসিয়াম, জিংক, ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে ইত্যাদি।
নিয়মিত যা করণীয়ঃ
i) নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করানো।
ii) রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ১০ গ্রাম/ ডেসিলিটার রাখার চেষ্টা করতে হবে।
iii) হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসের টিকা দেওয়া।
iv) শিশুরোগীর ক্ষেত্রে প্রতি তিন মাস অন্তর উচ্চতা, ওজন, লিভার ফাংশন টেস্ট করাতে হবে।
v) আট থেকে ১০ ব্যাগ রক্ত দেওয়ার পর রক্তে লৌহের পরিমাণ নির্ণয় করতে হবে।
vi) রক্তে লৌহের মাত্রা এক হাজার ন্যানো গ্রাম বা মিলি লিটারের ওপরে হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া।
vii) বিশুদ্ধ রক্ত পরিসঞ্চালন নিশ্চিত করা।
viii) শিশুর প্রতিবছর বুদ্ধি ও বিকাশ পর্যবেক্ষণ করা।
অবশেষে রক্তের একটি জটিল রোগ থ্যালাসেমিয়া। এটি জন্মগত রক্তস্বল্পতাজনিত রোগ। এই রোগে নিয়মিত চিকিৎসকের তত্ত্বাবধায়নে থেকে চিকিৎসা করতে হবে।
থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে করনীয়
- পরিবারের কারও থ্যালাসেমিয়া রোগের ইতিহাস থাকলে, সন্তান গ্রহনের পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
- বিবাহের ক্ষেত্রে পাত্র এবং পাত্রীর রক্ত পরীক্ষা করে দেখতে হবে, তাদের মধ্যে কেউ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত কিনা। আবার নিকট আত্মীয়দের মধ্যে বিয়ের ক্ষেত্রে থ্যালাসেমিয়া রোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই, এ ব্যপারে সাবধান হতে হবে।
থ্যালাসেমিয়া পরবর্তী জটিলতা
থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের বার বার রক্ত পরিবর্তনের ফলে রক্তবাহিত বিভিন্ন রোগ বিশেষ করে হেপাটাইটিসের সংক্রমণের সম্ভবনা বেড়ে যায়। আবার বার বার রক্ত পরিবর্তনের ফলে রক্তে আয়রণের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং তা হৃৎপিন্ড, যকৃত এবং এন্ডোক্রাইন ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্থ করে। অস্থিমজ্জা প্রসারিত হয়ে হাড় পাতলা ও ভঙ্গুর হয়ে যেতে পারে। ফলে মেরুদন্ডের হাড় ভেঙ্গে যাবার সম্ভাবনা থাকে। আবার থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীর প্লীহা বড় হয়ে যায়।
থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের বার বার রক্ত পরিবর্তনের ফলে রক্তবাহিত বিভিন্ন রোগ বিশেষ করে হেপাটাইটিসের সংক্রমণের সম্ভবনা বেড়ে যায়। আবার বার বার রক্ত পরিবর্তনের ফলে রক্তে আয়রণের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং তা হৃৎপিন্ড, যকৃত এবং এন্ডোক্রাইন ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্থ করে। অস্থিমজ্জা প্রসারিত হয়ে হাড় পাতলা ও ভঙ্গুর হয়ে যেতে পারে। ফলে মেরুদন্ডের হাড় ভেঙ্গে যাবার সম্ভাবনা থাকে। আবার থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীর প্লীহা বড় হয়ে যায়।
শিশুর থ্যালাসেমিয়া নির্ণয়
থ্যালাসেমিয়া মেজর অর্থাৎ যে শিশু বাবা এবং মা উভয়ের কাছ থেকেই সমস্যাগ্রস্ত জিন জন্মগতভাবে পেয়েছে, জন্মের পরপরই শিশুটিকে ফ্যাকাসে দেখা যাবে। শিশুর বৃদ্ধি স্বাভাবিকভাবে হবে না অর্থাৎ তার হাঁটা, দাঁড়ানো বা বসা সবকিছুই অন্য বাচ্চাদের তুলনায় অনেক ধীরে হবে। ১০ বছরের একটা স্বাভাবিক বাচ্চার তুলনায় একটা অসুস্থ্য বাচ্চা দেখতে ৫ বছরের মত লাগবে। শিশুটির রক্তস্বল্পতা, ক্ষুধামন্দা, সব বিষয়ে অনাগ্রহ ইত্যাদি দেখা যাবে। আবার দুই চোখের দূরত্বটা বেড়ে যেতে পারে, নাকের গোড়া প্রসারিত হয়ে যেতে পারে, কপালের সামনের হাড় ফুলে উঠতে পারে, দাঁত ফাঁক হয়ে যেতে পারে, পেট ফুলে উঠতে পারে, হাত পা ও চোখ হলুদ দেখা যেতে পারে ইত্যাদি অর্থাৎ শিশুটিকে দেখে স্বাভাবিক মনে হবে না। আবার পরীক্ষা করলে তার প্লিহা দেখা যাবে। এই প্লিহা প্রথমে বড় হয়, এর পর আস্তে আস্তে লিভার বড় হয়। এই অঙ্গগুলো বড় হলে, তখন খুব ঘন ঘন রক্ত দিতে হয়। নিয়মিত রক্ত না দিলে শিশুটি স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারে না।
থ্যালাসেমিয়া মেজর অর্থাৎ যে শিশু বাবা এবং মা উভয়ের কাছ থেকেই সমস্যাগ্রস্ত জিন জন্মগতভাবে পেয়েছে, জন্মের পরপরই শিশুটিকে ফ্যাকাসে দেখা যাবে। শিশুর বৃদ্ধি স্বাভাবিকভাবে হবে না অর্থাৎ তার হাঁটা, দাঁড়ানো বা বসা সবকিছুই অন্য বাচ্চাদের তুলনায় অনেক ধীরে হবে। ১০ বছরের একটা স্বাভাবিক বাচ্চার তুলনায় একটা অসুস্থ্য বাচ্চা দেখতে ৫ বছরের মত লাগবে। শিশুটির রক্তস্বল্পতা, ক্ষুধামন্দা, সব বিষয়ে অনাগ্রহ ইত্যাদি দেখা যাবে। আবার দুই চোখের দূরত্বটা বেড়ে যেতে পারে, নাকের গোড়া প্রসারিত হয়ে যেতে পারে, কপালের সামনের হাড় ফুলে উঠতে পারে, দাঁত ফাঁক হয়ে যেতে পারে, পেট ফুলে উঠতে পারে, হাত পা ও চোখ হলুদ দেখা যেতে পারে ইত্যাদি অর্থাৎ শিশুটিকে দেখে স্বাভাবিক মনে হবে না। আবার পরীক্ষা করলে তার প্লিহা দেখা যাবে। এই প্লিহা প্রথমে বড় হয়, এর পর আস্তে আস্তে লিভার বড় হয়। এই অঙ্গগুলো বড় হলে, তখন খুব ঘন ঘন রক্ত দিতে হয়। নিয়মিত রক্ত না দিলে শিশুটি স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারে না।
বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা কতটা জরুরি
থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধের পূর্ব সতর্কতাস্বরূপ বিয়ের আগে পাত্র এবং পাত্রীর রক্তের হিমোগ্লোবিনের অবস্থা পরীক্ষা করে দেখা উচিত। স্বামী এবং স্ত্রী দু’জনেই এ রোগের বাহক হলে সন্তানের এ রোগ হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। সাধারনত থ্যালাসেমিয়ার কোনোরূপ সম্ভাবনা আছে এমন পুরুষ বা মহিলার সঙ্গে অন্য কোন থ্যালাসেমিয়া রোগী বা রোগের সম্ভাবনা আছে এমন কারও বিয়ে হলে তাদের সন্তানের এই রোগে আক্রান্তের সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং বিয়ের পূর্বে রক্ত পরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নিলে সেটা সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য মঙ্গলজনক হবে।
থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধের পূর্ব সতর্কতাস্বরূপ বিয়ের আগে পাত্র এবং পাত্রীর রক্তের হিমোগ্লোবিনের অবস্থা পরীক্ষা করে দেখা উচিত। স্বামী এবং স্ত্রী দু’জনেই এ রোগের বাহক হলে সন্তানের এ রোগ হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। সাধারনত থ্যালাসেমিয়ার কোনোরূপ সম্ভাবনা আছে এমন পুরুষ বা মহিলার সঙ্গে অন্য কোন থ্যালাসেমিয়া রোগী বা রোগের সম্ভাবনা আছে এমন কারও বিয়ে হলে তাদের সন্তানের এই রোগে আক্রান্তের সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং বিয়ের পূর্বে রক্ত পরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নিলে সেটা সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য মঙ্গলজনক হবে।
থ্যালাসেমিয়া একটি জিনঘটিত রোগ। এই রোগে রক্তের লোহিতকণিকা ভেঙে যায় এবং রোগী রক্তস্বল্পতায় ভুগতে থাকে। রক্তের সম্পর্কের মধ্য বিয়ে হলে, তাদের সন্তানদের মধ্যে এই রোগটি বেশি হতে পারে।
বারবার রক্ত দিয়েও কোনো রোগীকেই পুরোপুরি সুস্থ করে তোলা যায় না। প্রথম প্রথম তিন মাস পরপর এক ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হলেও পরে দু’মাস পরপর রক্তের প্রয়োজন হয়। আবার বয়স্ক থ্যালাসেমিয়া রোগীদের ক্ষেত্রে অনেকের মাসে একাধিকবার রক্ত দেবার প্রয়োজন হয়। এ রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় দরিদ্র মানুষের জন্য রোগাক্রান্ত সন্তানের চিকিৎসার খরচ বহন করা অসম্ভব হয়ে যায়। তাই, থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। তাই, বিয়ের পূর্বে রক্ত পরীক্ষা এবং নিকটাত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে পরিত্যাগের মাধ্যমে এ রোগ প্রতিরোধ করতে হবে।
সবশেষে
যেহেতু থ্যালাসেমিয়ার তেমন চিকিৎসা আমাদের দেশে নেই, তাই এ রোগ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি গর্ভস্থ শিশুর থ্যালাসেমিয়া আছে কি-না তাও পরীক্ষা করে দেখা উচিত। শিশু গর্ভে আসার চার মাস পর থেকে থ্যালাসেমিয়া আছে কিনা তা নির্ণয় করা সম্ভব। বাংলাদেশের জনসংখ্যার শতকরা প্রায় ৪.৮ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৭০ লাখ মানুষ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত এবং সারা পৃথিবীতে প্রায় এক বিলিয়ন থ্যালাসেমিয়া রোগী আছে। প্রতিবছর আরও প্রায় ৩.৫ মিলিয়ন মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে ব্যপক সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন।
যেহেতু থ্যালাসেমিয়ার তেমন চিকিৎসা আমাদের দেশে নেই, তাই এ রোগ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি গর্ভস্থ শিশুর থ্যালাসেমিয়া আছে কি-না তাও পরীক্ষা করে দেখা উচিত। শিশু গর্ভে আসার চার মাস পর থেকে থ্যালাসেমিয়া আছে কিনা তা নির্ণয় করা সম্ভব। বাংলাদেশের জনসংখ্যার শতকরা প্রায় ৪.৮ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৭০ লাখ মানুষ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত এবং সারা পৃথিবীতে প্রায় এক বিলিয়ন থ্যালাসেমিয়া রোগী আছে। প্রতিবছর আরও প্রায় ৩.৫ মিলিয়ন মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে ব্যপক সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন।
প্রতিরোধে চাই সচেতনতা ঃ
এ রোগ প্রতিরোধের কোনো বিকল্প নেই। সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি বাড়াতে প্রচার মাধ্যমের ব্যাপক অংশ গ্রহণ প্রয়োজন। টেলিভিশন, পত্রিকা, রেডিও, ইন্টারনেট ভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ব্লগ, টুইটারে ব্যাপক আলোচনা দরকার। গর্ভাবস্থায় রোগ নির্ণয় নিশ্চিত করতে হবে। বিভাগীয় শহরগুলোতে অন্তত জেনেটিক পরামর্শকেন্দ্র স্থাপন করা দরকার। এ রোগটি একেবারে নির্মূল করতে জেনেটিক কাউন্সেলিংয়ের কোনো বিকল্প নেই। আমাদের দেশে এই বিশাল সংখ্যার রোগীর যদি আর বৃদ্ধি না চাই, তাহলে এখনই আইন করে আন্তঃ-থ্যালাসেমিক পরিবারে বিয়ে বন্ধ করতে হবে। ত্রুটিপূর্ণ হিমোগ্লোবিনের বাহকদের মধ্যে বিয়ে বন্ধ করতে হবে।
আমাদের দেশে থ্যালাসেমিয়া রোগীর চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধই সহজ। তাই একটি সমন্বিত স্বাস্থ্য কর্মসূচি ও পাশাপাশি সামাজিক উদ্যোগ দরকার।
সারা বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় নয় লাখ শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে। বাংলাদেশে এর সংখ্যা হচ্ছে আনুমানিক ১০ হাজার। বিশ্বের কয়েকটি দেশ, যেখানে থ্যালাসেমিয়ার প্রকোপ বাংলাদেশ থেকে অনেক বেশি ছিল, সমন্বিত স্বাস্থ্য কর্মসূচির মাধ্যমে এ রোগে আক্রান্ত শিশুর জন্ম প্রায় শূন্য বা শূন্যের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে তারা।
উদাহরণস্বরূপ সাইপ্রাসের কথা ধরা যাক। ১৯৭০ সালে সেখানে প্রতি ১৫৮ জন শিশুর মধ্যে একটি শিশু জন্ম নিত থ্যালাসেমিয়া নিয়ে, আজ সেখানে থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্ম নেয়ার সংখ্যা শূন্যের কোঠায়। গ্রিস, ইতালিসহ অনেক দেশই থ্যালাসেমিয়া নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট অগ্রগতি সাধন করেছে। এগিয়ে আসতে হবে আমাদেরও । সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি চাই ব্যক্তিগত সচেতনতা।
অধ্যাপক ডা. এ. বি. এম. ইউনুছ, ব্লাক ক্যান্সার ও রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ, চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক থ্যালাসেমিয়া বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববদ্যালয়, চেম্বার-গ্রীন ভিউ ক্লিনিক, গ্রীন রোড, ঢাকা।
এ বিষয়ে কথা বলেছেন দেশের খ্যাতনামা ব্লাড ক্যানসার ও রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা এ বি এম ইউনূস।
প্রশ্ন : থ্যালাসেমিয়া নামটি অনেকেই এখন জানে। অনেকেই এ রোগে আক্রান্ত হয়। এ রোগ হয় কেন এবং এর কারণ কী?
উত্তর : থ্যালাসেমিয়া কোনো পরিবেশ দ্বারা বা জীবাণু দ্বারা হয়, বিষয়টি তা নয়। এটি একটি বংশগত রোগ। এটি জন্মগত বা বংশগত রক্তস্বল্পতাজনিত রোগ। একটি শিশুর দৈহিক গঠন থেকে শুরু করে সবকিছু জিনগতভাবে নিয়ন্ত্রিত। তার বাবা-মায়ের গুণাবলি তার ভেতরে সঞ্চারিত হয়। ঠিক একইভাবে তার ভেতরে যে রক্ত সঞ্চারিত হয়, সেটাও নির্ভর করে তার বাবা ও মায়ের রক্তের গঠন কেমন হবে, তার ওপর। বিশেষ করে রক্তের যে হিমোগ্লোবিন, সেটা পরিবর্তন হয় আলফা ও বেটা দুটো চেইনের মাধ্যমে। এই চেইনের মধ্যে যদি জন্মগত ত্রুটি বাবা-মায়ের মধ্যে থাকে, চেইন যদি দুর্বল হয়, যে পরিমাণ চেইন তৈরি হওয়ার কথা সে পরিমাণ না থাকে, জিনগত কোনো সমস্যার কারণে এ সমস্যা হতে পারে। এটা বাবা-মায়ের মধ্যে থাকলে সন্তানের ভেতর সঞ্চারিত হয়। তাহলে একজন বাবা ও মা তাঁর ভেতরে যদি থ্যালাসেমিয়ার কোনো জিন (অর্থাৎ হিমোগ্লোবিন তৈরির যে সমস্যা সেটা যদি থাকে, তাহলে বাচ্চার ভেতর এটা সঞ্চারিত হবে) থাকে, বাচ্চা তখন এই রোগের বাহক বা এই রোগে আক্রান্ত হবে। যদি বাবা ও মায়ের মধ্যে শুধু একজনের কাছ থেকে এসে থাকে, একে বলব থ্যালাসেমিয়া মাইনর। আর যদি উভয়ের কাছ থেকে এসে থাকে, তখন জটিল আকার ধারণ করতে পারে। অথবা মাঝামাঝি অবস্থান ধারণ করতে পারে। সে ক্ষেত্রে আমরা একে বলব থ্যালাসেমিয়া মেজর।
প্রশ্ন : এই মাইনর ও মেজরের বিষয়টি কী? অনেক সময় রক্তে জিনগত কারণে সমস্যা বা বেটাচেইনের সমস্যা হলেও রোগটি প্রকাশ পাচ্ছে না। আবার অনেকের ক্ষেত্রে প্রকাশ পাচ্ছে। এর কারণগুলো কী?
উত্তর : বিষয়টি হলো বাবা ও মা উভয়ের ক্ষেত্রে যদি কোনো জেনেটিক সমস্যা থাকে এবং উভয়ের কাছ থেকে যদি থ্যালাসেমিয়ার জিন নিয়ে আসে, বংশপরম্পরায় যদি তার মধ্যে ধারণ করে নিয়ে আসে, তাহলে দেখা যাবে তার হিমোগ্লোবিন তৈরির বিষয়টি একেবারে সংকুচিত হয়ে আসছে। সে ক্ষেত্রে তার জন্মের পর থেকেই বিষয়গুলো শুরু হয় এবং রক্তশূন্যতা হয়। আবার যদি বাবা ও মায়ের মধ্য থেকে যেকোনো একজন থেকে একটা সমস্যাগ্রস্ত জিন যদি বাচ্চার ভেতর সঞ্চালিত হয়, তাহলে (এখানে মনে রাখতে হবে বাবার থেকে একটা জিন এবং মায়ের থেকে একটা জিন, এই এক জোড়া জিন দিয়ে সন্তান তৈরি হয়।) এর মধ্যে একটা জিন যদি সমস্যাগ্রস্ত হয় মা অথবা বাবার কাছ থেকে, তাহলে তার আরেকটি জিন কিন্তু ভালো আছে, ওই সক্রিয় জিন দিয়ে মোটামুটি সে চলনসই হয়ে যায়। মধ্য বয়স পর্যন্ত তার কোনো সমস্যা হয় না। এদের কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, মধ্য বয়সে গিয়ে রক্তের স্বল্পতা দেখা দেয়।
প্রশ্ন : কী লক্ষণ দেখলে বোঝা যাবে, বাচ্চাদের থ্যালাসেমিয়া আছে কি না?
প্রশ্ন : কী লক্ষণ দেখলে বোঝা যাবে, বাচ্চাদের থ্যালাসেমিয়া আছে কি না?
উত্তর : যার এই থ্যালাসেমিয়া মেজর, অর্থাৎ যে বাবা ও মা উভয়ের কাছ থেকে তার এই সমস্যাগ্রস্ত জিন জন্মগতভাবে পেয়েছে, তার জন্মের পরপরই দেখা যাবে সে ফ্যাকাসে। আর বাচ্চার যে স্বাভাবিক বৃদ্ধিগুলো হয়, সেগুলো ধীরে ধীরে হচ্ছে। অর্থাৎ তার হাঁটা, দাঁড়ানোর সময়, বসার সব মাইলস্টোনই ধীরগতির হয়ে যায়। অন্য একটা সাধারণ বাচ্চার সঙ্গে যদি তুলনা করি, তার বৃদ্ধিটা ধীরে হয়। একটা ১০ বছরের স্বাভাবিক বাচ্চার যেমন বাড়ন্ত হবে আর থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত বাচ্চাকে দেখতে মনে হবে পাঁচ বছর। এই ফ্যাকাসে মানে হলো তার রক্তস্বল্পতা। তার শক্তি পাচ্ছে না, তার ক্ষুধামন্দা, কোনো কিছুতে সে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এই সঙ্গে শারীরিক কিছু বৈশিষ্ট্য দেখতে পাব। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, সে বিদেশিদের মতো সাদা। এ ছাড়া তার দুই চোখের দূরত্বটা বেড়ে যায়। নাকের গোড়া প্রসারিত হয়ে যায়। বড় হলে দেখা যাবে দাঁত হয়তো ফাঁক হয়ে আছে। কপালের সামনে যে হাড় আছে, সেটা ফুলে যায়। সবকিছু মিলে তাকে বলা হয় থ্যালাসেমিক ফেসি। অর্থাৎ একটা আদিবাসী ভাব তার মধ্যে দেখা যায়। চোখ অনেকটা হলুদ। হাতের দিকে তাকালেও মনে হবে হলুদ। এর পর যদি তার পেটের দিকে তাকাই দেখা যাবে পেটটা বেশ ফুলে আছে।
আমরা যদি পরীক্ষা করি দেখা যাবে তার প্লিহা। এটা বাঁ দিকে খাঁচার নিচে থাকে। এই প্লিহা প্রথমে বড় হয়, এর পর লিভার আস্তে আস্তে বড় হয়। এই অঙ্গগুলো যখন বড় হয়ে যায়, তখন তার খুব ঘন ঘন রক্ত দিতে হয়। এই রক্ত না দিলে সে স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারে না। এই লক্ষণগুলো দেখলে বাবা-মা বুঝবেন তার স্বাভাবিক গতি বৃদ্ধি করছে না।
প্রশ্ন : থ্যালাসেমিয়া রোগের কি কোনো চিকিৎসা আছে, সেটা কি নিরাময়যোগ্য?
উত্তর : থ্যালাসেমিয়া নিরাময়যোগ্য। তবে যেহেতু এটি একটি জন্মগত সমস্যা, যদি তার জিনগত সমস্যাকে পরিবর্তন করা না হয়, অর্থাৎ যে অঙ্গ দিয়ে সমস্যাযুক্ত হিমোগ্লোবিন তৈরি হচ্ছে, সে অঙ্গ মানে বোনমেরু (অস্থিমজ্জা), এটাকে যদি অস্থিমজ্জা সংযোজনের মাধ্যমে পরিবর্তন করা যায়, তাহলে একে সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে একজন ম্যাচ ডোনার লাগবে। এবং এটা দেশের বাইরে গিয়ে করতে হবে। কারণ, আমাদের দেশে এটা এখনো চালু হয়নি। আর যাঁরা বোনমেরু ট্রান্সপ্লান্ট করতে পারছেন না, তাঁদের নিয়মিত রক্ত দিয়ে জীবন সচল রাখতে হবে। তবে এই রক্ত দিতে দিতে তাঁর শরীরে সমস্যা তৈরি হয়, আয়রন জমে যেতে পারে। এই আয়রন জমে গিয়ে হার্টের সমস্যা, হরমোনের সমস্যা, লিভার, কিডনি, মস্তিষ্কের সমস্যা এ ধরনের অনেক সমস্যা হয়। তাই একজন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধায়নে থেকে রক্ত দিতে হবে এবং জটিলতাগুলোরও চিকিৎসা করতে হবে।
No comments