আঠারোর পরেও উচ্চতা বাড়ানো সম্ভব

আঠারোর পরেও উচ্চতা বাড়ানো সম্ভব!!!!


বয়স আঠারো পেরিয়ে গেছে। কিন্তু উচ্চতা নিয়ে সন্তুষ্ট নন। আশে পাশের বন্ধুদের উচ্চতা দেখলে আফসোস হয়, আরেকটু লম্বা হলে ভালো হতো!
বয়স আঠারো পেরুলেও উচ্চতা বাড়ানো সম্ভব। তবে তার জন্য প্রয়োজন খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম এবং কিছু নিয়ম মেনে চলা। পিটুইটারি গ্ল্যান্ডের গ্রোথ হরমোনের উপরই নির্ভর করে হাড়ের বৃদ্ধি, শারীরিক গঠন এবং মেটাবোলিজম। খাদ্যাভ্যাস এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে এই গ্রোথ হরমোনকে সক্রিয় করে তুললে আঠারোর পরেও উচ্চতা কিছুটা হলেও বাড়িয়ে নেয়া সম্ভব। জেনে নিন পদ্ধতি।
নিয়মিত হ্যাঙ্গিং এক্সারসাইজ: মাটি থেকে অন্তত ৬/৭ ফিট উপরের কোনো রড ধরে আপনাকে ঝুলতে হবে। হাত সোজা রাখতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে কোনোভাবেই যেন পা মাটিতে না লাগে। এরপর দোলনায় চড়ার মতো সুইং করতে হবে। সুইং করার সময় পিঠ সোজা রাখা জরুরি।
পুষ্টিকর খাবার: উচ্চতা বাড়াতে সুষম এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া জরুরি। প্রতিদিন খাবার তালিকায় নানা রকম ফল, সবজি, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট রাখলে তা গ্রোথ হরমোনকে সক্রিয় করে তুলবে। মেটাবোলিজমও বাড়াবে। ফলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে এবং হাড় মজবুত হবে। ড্রাই ফ্রুটস, দুধ এবং সবুজ শাক অবশ্যই খেতে হবে রোজ।
স্ট্রেচিং: যারা উচ্চতা বাড়াতে চাইছেন তাদের নিয়মিত স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ করা উচিত। অন্তত প্রতিদিন পনের মিনিট করে এই ব্যায়াম করা উচিত। এতে মেরুদণ্ডের হাড় ভালো থাকে এবং লোয়ার ব্যাকের টেনশন হ্রাস পায়।
পর্যাপ্ত ঘুম: ঘুমের মাঝেও আমাদের শরীর সক্রিয় থাকে। বিশেষ করে শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধি ঘুমের মাঝেই হয়, বড়দেরও। এর কারণ হলো ঘুমের মাঝে পিটুইটারি গ্ল্যান্ড বেশি সক্রিয় থাকে। তাই উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত ঘুম দরকার। এছাড়াও কীভাবে ঘুমচ্ছেন সেটাও দেখা জরুরি। উচ্চতা বাড়াতে চাইলে বালিশ ছাড়া চিত হয়ে শোয়া ভালো। পায়ের নিচে বালিশ দিয়ে পা জোড়া উঁচু করে রাখতে হবে। এই পজিশনে মেরুদণ্ড মজবুত হয়। এইভাবে ঘুমালে উচ্চতা বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। পাশাপাশি ব্যাক পেইনের সমস্যা থেকেও মুক্তি মেলে।
অ্যালকোহল এবং ধূমপান ত্যাগ: ধূমপান এবং অ্যালকোহল শরীরের স্বাভাবিক কর্মপ্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে। ধূমপানে শরীরের রক্ত সঞ্চালন কমিয়ে দেয় এবং পুষ্টি উপাদান শোষণে বাঁধা দেয়। তাই উচ্চতা বৃদ্ধি করতে চাইলে অ্যালকোহল এবং ধূমপান ত্যাগ করতে হবে। এনডিটিভি।

উচ্চতা বাড়ানোর ৬টি দারুণ কার্যকরী টিপস

অনেকেই নিজের উচ্চতা নিয়ে বেশ হীনমন্যতায় ভুগে থাকেন। বিশেষ করে যখন তার পাশে এসে দাঁড়ান ভালো উচ্চতার সুগঠিত দেহের কোনো মানুষ। আপনমনেই বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস। অনেকের ধারণা উচ্চতা বংশগত একটি ব্যাপার অর্থাৎ উচ্চতা কম বেশি হওয়ার পেছনে রয়েছে শুধুমাত্র জেনেটিক কিছু ব্যাপার। কিন্তু কথাটি পুরোপুরি সত্য নয়। গবেষকগণ বলেন মানুষের দেহের উচ্চতা কোন বেশি হওয়ার পেছনে জেনেটিক্যাল কিছু ব্যাপার বাদেও কাজ করে আরও নানা বিষয়। গবেষণায় দেখা যায় উচ্চতার উপর প্রায় ২০% প্রভাব থাকে আমাদের পরিবেশ, খাদ্যাভ্যাস ও আমাদের দৈনন্দিন কার্যকলাপ এবং সাধারণত ২১/ ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত উচ্চতা বৃদ্ধি পায় কিন্তু আপনার আত্মবিশ্বাস ও সার্বিক অবস্থা ঠিক থাকলে এর পরেও কিছুটা উচ্চতা বাড়ানো সম্ভব। সুতরাং এগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে আমরা বাড়াতে পারি আমাদের দেহের উচ্চতা। চলুন তাহলে আজকে জেনে নেয়া যাক দেহের উচ্চতা বাড়াতে কী কী কাজ করা উচিত।
১) পরিমিত পরিমাণে ঘুম ও বিশ্রাম
আমরা সকলেই জানি ঘুমের সময় আমাদের দেহ গঠনের টিস্যুগুলো কাজ করে। এরফলে আমাদের উচ্চতা ও শারীরিক গঠন বৃদ্ধি পায়। হিউম্যান গ্রোথ হরমোন প্রাকৃতিক উপায়ে আমাদের দেহে উৎপন্ন হতে থাকে যখন আমরা পরিমিত পরিমাণে ঘুমাতে পারি এবং বিশ্রাম নিতে পারি। তাই বয়স অনুযায়ী ৮-১১ ঘণ্টা ঘুম ও বিশ্রাম দেয়ার চেষ্টা করুন নিজেকে। প্রাকৃতিক উপায়ে এটিই সবচাইতে ভালো পদ্ধতি উচ্চতা বৃদ্ধি করার।

২) নিয়মিত ব্যায়াম এবং খেলাধুলা
ছোটবেলা থেকেই যারা অনেক বেশি খেলাধুলা করে থাকে এবং সুঠাম দেহের অধিকারী হয় তাদের উচ্চতা অন্যান্যদের তুলনায় একটু বেশি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। এছাড়াও সাতার, আরোবিক্স, টেনিস, ক্রিকেট, ফুটবল, বাস্কেটবলের মতো খেলার মাধ্যমে ও হাঙ্গিং, স্ট্রেচিং ধরণের ব্যায়াম দেহের উচ্চতা বৃদ্ধিতে বেশ সহায়ক। কারণ যারা অনেক বেশি খেলাধুলা এবং ব্যায়াম করেন ও যারা সুঠাম দেহের অধিকারী তারা স্বভাবতই একটু বেশি এবং পুষ্টিকর খাবার খান। এতে করে দুটো ব্যাপারই কাজ করে উচ্চতা বৃদ্ধিতে।

৩) যোগব্যায়াম
যোগব্যায়ামের অভ্যাস উচ্চতা বৃদ্ধিতে বেশ ভালো ভূমিকা পালন করে থাকে। যোগব্যায়াম আমাদের দেহে ঘুমের সময় যে গ্রোথ হরমোনের নিঃসরণ ঘটায় তা উৎপন্ন করে এবং আমাদের উচ্চতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ট্রাইঅ্যাঙ্গেল পোজ, কোবরা পোজ, মাউন্টেইন পোজ, প্লিজেন্ট পোজ, ট্রি পোজ ইত্যাদি ধরণের উচ্চতা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভাবে সহায়ক।

৪) দেহের সঠিক অঙ্গবিন্যাস
হাঁটাচলা করা এবং বসার সময় সঠিকভাবে ঘাড় ও মেরুদণ্ড সোজা রেখে হাঁটা ও বসা এবং শোয়ার সময় ঘাড় বেশি বাঁকা না করে মেরুদণ্ডের প্রায় সমান্তরালে রাখার মতো অঙ্গবিন্যাসও উচ্চতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে।

৫) সুষম খাদ্যাভ্যাস
উচ্চতা বৃদ্ধিতে সব চাইতে সহায়ক হচ্ছে সুষম খাবার খাওয়ার অভ্যাস। পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর খাবার দেহের হাড় ও কোষের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ভিটামিন ডি আমাদের দেহে গ্রোথ হরমোন উৎপন্ন করে, ক্যালসিয়াম হাড়ের গঠন এবং হাড় মজবুত করে, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস এবং কার্বোহাইড্রেট কোষ গঠন ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এছাড়াও খাবার হজম এবং পুরো দেহে পুষ্টি পৌঁছানোর ব্যাপারটিও উচ্চতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। তাই সুষম খাবার নিয়মিত খাবার চেষ্টা করুন।

৬) উচ্চতা বৃদ্ধিতে বাঁধা প্রদান করে এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকুন
জাংক ফুড, স্যাচুরেটেড ফ্যাট, কার্বোনেটেড ড্রিংকস, অতিরিক্ত চিনি ইত্যাদি ধরণের খাবার, ধূমপান ও মদ্যপান করার অভ্যাস, রাতে না ঘুমানো ইত্যাদি আমাদের দেহে গ্রোথ হরমোন তৈরিতে বাঁধা প্রদান করে থাকে। বিশেষ করে ধূমপান এবং মদ্যপানের অভ্যাস যদি বাবা-মায়ের থেকে থাকে তবে তার প্রভাব সন্তানের উপরেও পড়ে। তাই এইসকল কাজ থেকে বিরত থাকুন।

উচ্চতা বাড়াতে এক্সারসাইজ

উচ্চতা বাড়াতে এক্সারসাইজ এবং যোগাসনের থেকে ভালো উপায় আর হয় না। নিয়মিত এক্সারসাইজ শুধুমাত্র উচ্চতা বাড়াতে সাহায্য করবে না, আপনার ফ্লেকসিবিলিটিও বাড়াবে। উচ্চতা বাড়াতে এক্সারসাইজের গুরুত্ব নিয়ে লিখেছেন নওশীন শর্মিলী
অনেকেই মনে করেন যে, একটা বয়সের পর উচ্চতা বাড়ানো আর সম্ভব নয়। এটা খানিকটা সত্য হলেও সঠিক এক্সারসাইজ আপনার উচ্চতা কিছুটা বাড়াতে সাহায্য করবে। আসলে এক্সারসাইজ করলে শরীরে গ্রোথ হরমোন নিঃসৃত হয়, যা কার্টিলেজকে শক্ত করে ও হাড়ের ডেনসিটি বাড়ায়। এর ফলে আপনার উচ্চতা বাড়তে পারে। তবে আপনার উচ্চতা কতটা বাড়বে তা নির্ভর করবে শরীরের গঠনের ওপর।
স্ট্রেচিং এবং ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ
এক্সারসাইজ ১ : ফরওয়ার্ড বেন্ড
পা ফাঁক করে সোজা হয়ে দাঁড়ান। হাত সোজা রেখে নিচু হওয়ার চেষ্টা করুন। হাঁটু না ভেঙে মাটি ছোঁয়ার চেষ্টা করুন। তারপর প্রথম পজিশনে ফিরে আসুন।
এক্সারসাইজ ২ :স্পট জাম্প
সোজা হয়ে দাঁড়ান। হাত দুটোকে বাইরের দিকে স্ট্রেচ করুন। এবার পায়ের আঙুলের ওপর ব্যালেন্স করে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে লাফাতে শুরু করুন। ২ মিনিট টানা লাফানোর পর বিশ্রাম নিন।
এক্সারসাইজ ৩ :বার হ্যাঙ্গিং
মাটি থেকে অন্তত ৭ ফিট ওপরে রাখা কোনো বার ধরে আপনাকে ঝুলতে হবে। হাত সোজা রাখবেন। খেয়াল রাখুন কোনোভাবেই যেন আপনার পা মাটি না ছুঁতে পারে। এবার দোলনা চড়ার মতো সুইং করুন। তবে কবজির ওপর বেশি প্রেসার দিবেন না। সুইং করার সময় পিঠ সোজা রাখা অত্যন্ত জরুরি।
এক্সারসাইজ ৪ :ব্যাক বেন্ড
হাত মাথার ওপরে তুলে সোজা হয়ে দাঁড়ান। এবার আস্তে আস্তে কোমর না ভেঙে যতটা সম্ভব পেছন দিকে বেন্ড করার চেষ্টা করুন। খেয়াল রাখবেন হাত যেন একদম সোজা থাকে। শরীরকে যতটা সম্ভব স্ট্রেচ করুন। খানিকক্ষণ এই পজিশনে থেকে প্রথম অবস্থায় ফিরে আসুন। এ ছাড়াও সাইক্লিং, সুইমিং, স্কিপিং জাতীয় এক্সারসাইজ করতে পারেন। তবে যেকোনো ধরনের এক্সারসাইজ করার আগে বিশেষজ্ঞ ট্রেনারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। যদি আপনার শারীরিক কোনো সমস্য থাকে, সেক্ষেত্রে এক্সারসাইজ করার সময় বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।
যোগাসন
যোগাসন করলে শুরু শরীর সুস্থ থাকে না। এতে আপনার উচ্চতাও বাড়তে পারে। পাশাপাশি যোগাসনের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
এক্সারসাইজ ১ :তদাসন
তদাসন এক ধরনের স্ট্রেচিং যোগাসন। সোজা হয়ে দাঁড়ান। হাতদুটো থাইয়ের ওপর রাখুন। সোজাসুজি তাকান। হাত একদম সোজা রাখবেন। এবার হাতদুটোকে মাথার ওপর তুলুন। খেয়াল রাখবেন কনুই যেন একদম সোজা থাকে। এরপর আস্তে আস্তে গোড়ালি ওপরদিকে পায়ের আঙুলের ওপর ব্যালেন্স করার চেষ্টা করুন। এরপর প্রথম পজিশনে ফিরে আসুন। তদাসন শরীরের মাসলগুলোকে স্ট্রেচ করে শরীরে অক্সিজেন বাড়িয়ে দেয়। যা উচ্চতা বাড়ানোর পাশাপাশি শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়াও বিভিন্ন ব্যালেন্সিং যোগাসন করতে পারেন।

No comments

Powered by Blogger.