প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস গরম পানি পানের উপকারিতা!

প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস গরম পানি পানের উপকারিতা!


পানি পানের প্রয়োজনীয়তা আর উপকারিতার কথা তো সবাই-ই জানে। দৈনিক অন্তত আট গ্লাস পানি পান করাটাকে চিকিৎসকেরা আমাদের শরীরের সুস্থতার জন্যে অত্যন্ত দরকারী বলে মনে করে থাকেন। তবে কম-বেশি আট গ্লাস পানি পান করলেও অনেক সময়, বিশেষ করে গরমকালে, খানিকটা গরম পানি পান করাটাকে খুব সচেতনভাবেই এড়িয়ে চলে সবাই। এর বদলে বেছে নেয় বরফ কুচি মেশানো ঠান্ডা শীতল পানিকে। কিন্তু আপনি কি জানেন যে, খানিকটা কষ্টকর হলেও এই গরমে এক গ্লাস গরম পানি আপনার শরীরকে দিতে পারে অনেকটুকু সুফল? চলুন জেনে আসি গরম পানি পানের চমৎকার এই ইতিবাচক দিকগুলো।
সর্দি-কাশি
সর্দি-কাশি হলে শ্বাসনালিতে সর্দি জমে যায়। সেই জমে থাকা সর্দি বের করতে গরম পানি অব্যর্থ। গরম পানি খেলে নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে।
শরীরের বিষাক্ততাকে দূর করে
আমাদের শরীরে প্রতিদিন মৃত কোষের পরিমাণ বাড়ে, শরীরের ভেতরে নানারকম বিষাক্ত পদার্থ জমা হয়। আর এসবকে ঝেটিয়ে বিদায় করতে এক গ্লাস গরম পানি অপ্রত্যাশিতভাবে সাহায্য করবে আপনাকে। গরম পানি পান করলে আপনার শরীর গরম হবে ও তাতে ঘামের জন্ম হবে। আর এই ঘামের মাধ্যমেই নিজের যত বিষাক্ত পদার্থ সেটা বাইরে বের করে দেবে শরীর। এভাবে সহজেই আপনি আপনার শরীরকে রাখতে পারবেন অনেকটা জীবাণুমুক্ত।
ত্বকের সুস্থতা নিশ্চিত করে
গরম পানি পান যেহেতু শরীরের সব কোষ থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে, ফলে সহজেই এর মাধ্যমে আপনি মুক্তি পেতে পারেন প্রচন্ড ঝামেলাময় ও বিরক্তিকর পিম্পলের হাত থেকে। এছাড়াও গরম পানি ত্বকের নষ্ট হয়ে যাওয়া লাবণ্যকেও ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। তাই এক গ্লাস গরম পানি পান করলে আপনার ত্বক থেকে থেকে খুব সহজেই বয়সের ছাপকে দূরে রাখতে পারবেন আপনি। গরম পানি ত্বককে আর্দ্র রাখে। নিয়মিত গরম পানি খেলে শরীরে বলিরেখা পড়া বা ব্রণের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
হজমে সহায়ক:
হজমের জন্য গরম পানি বেশ কার্যকরী। এ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসক বলেন, খালি পেটে গরম পানি খেলে এটা হজম প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। এছাড়া এটা ফ্যাট কমাতেও সহায়তা করে।
ওজন কমায়:
প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস গরম পানি সরাসরি আপনার ওজন কমাবে না। তবে ওজন কমানোর প্রক্রিয়াটি সহজ করবে। এটি খুব সহজেই আপনার শরীরের জমানো চর্বিকে গলতে সাহায্য করবে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রতিদিন সকালে গরম পানির সাথে লেবু মিশিয়ে খেলে আপনার আরও বেশি ক্যালরি খরচ হবে। ফলে ওজন কমবে।
প্রাকৃতিক ব্যথানাশক:
গরম পানি প্রাকৃতিক ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে। এটা খেলে টিস্যুতে রক্ত সরবরাহ বেড়ে যায়। যা মাংসপেশীতে প্রশান্তি এনে দেয়। সব ধরনের ব্যথা নিরাময়ে গরম পানি কার্যকর ভূমিকা রাখে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক পেট্রে। এছাড়া দ্রুত ঘুমাতেও সহায়তা করে গরম পানি।
দাঁতের জন্য সহায়ক:
ঠান্ডা পানির চেয়ে গরম পানি আপনার দাঁতের জন্য অনেক বেশি সহায়ক। লক্ষ্য করে দেখবেন, ঠাণ্ডা পানি খেলে দাঁত শিরিশির করে যা গরম পানি খেলে হয় না। এজন্য দাঁতের সুস্থতায় গরম পানি পান করুন। তবে অতিরিক্ত গরম পানি খাবেন না। এতে দাঁত নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
ঠান্ডা ও ব্যথার উপশমে কাজ করে
সর্দি লেগেছে কিংবা মাথাব্যথা? ঠান্ডাজনিত যেকোন সমস্যায় এক গ্লাস গরম পানি আপনাকে দিতে পারে অসম্ভব ভালো ফলাফল। কেবল তাই নয়, নানারকম পেটের ব্যথায়, বিশেষ করে নিছের অংশের পেশীকে সহজ করে দিয়ে নারীদের পিরিয়ডের প্রচন্ড ব্যথাকে সহনীয় পর্যায়ে আনতে সাহায্য করে ইষদুষ্ণ এক গ্লাস পানি।
চুল ও মাথার ত্বককে সুস্থ রাখে
গরম পানি পান চুলের কোষগুলোকে তাজা রাখে, চুলের গোড়াকে অনেক বেশি শক্তিশালী করে তুলে চুলকে কোমল ও পরিমাণে অনেকটা বেশি হয়ে উঠতে সাহায্য করে। এছাড়াও এর মাধ্যমে চুলের বৃদ্ধিকেও ত্বরান্বিত করতে পারে যে কেউ সহজেই। শুধু কি তাই? দিনে এক গ্লাস গরম পানি পান আপনার মাথার ত্বককেও খুশকিমুক্ত করে দিতে পারে পুরোপুরিভাবে। চুল পড়ার সমস্যায় ভুগছেন? তাহলে গরম পানি খান। এতে চুলের গোড়া শক্ত হয়। চুলের ডগা ফাটে না। চুল ঝকঝকে এবং স্বাস্থ্যজ্জ্বল থাকে।
এই কয়েকটি উপকারিতা শুনেই যারা ভাবছেন, বাহ! বেশ কাজের তো দিনে এক গ্লাস গরম পানি পান করা। তাদেরকে জানাচ্ছি, এটুকুই শেষ নয়। খাবার হজম করা, কোষ্ঠকাঠিন্য রোধসহ এমন আরো অনেক অনেকভাবে আমাদেরকে দৈনন্দিন জীবনে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এক গ্লাস গরম পানি। তাই আর দেরী কেন? আজ থেকেই শুরু করে দিন এক গ্লাস গরম পানি পান করার প্রক্রিয়া! প্রতিদিন খাওয়ার পরে গরম পানি খেলে গ্যাস, অম্বলের মতো সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। নিয়মিত গরম পানি পান দেহে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে।
তলপেটের যন্ত্রণায়
ঋতুস্রাবে সময় প্রায় সব নারী তলপেটের যন্ত্রণায় কষ্ট পান। এই সময়ে গরম জল খেলে তলপেটের পেশিগুলো স্বস্তি পায়। যার ফলে যন্ত্রণাও কমে।
অংশ বিশেষ সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি কর্তৃক অনুবাদিত।

No comments

Powered by Blogger.